২৮ অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস। দিবসটি সামনে রেখে নারীরা তাঁদের
নানা রকম সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেই সমস্যাগুলোর পরামর্শদিয়েছেন—পারভীন
শাহিদা আখতার, অধ্যাপক, মেডিকেল অনকোলজি, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা
ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।
সমস্যা: আমার বয়স ৪২ বছর। আমেরিকাপ্রবাসী ছোট বোনের স্তনে টিউমার হয়েছিল।
তাই সব সময় ভয়ে থাকি। আমার নিজের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শুনেছি,
পরিবারের কারও থাকলে এটি হতে পারে। আমার কি প্রতিবছর ম্যামোগ্রাফি করা
উচিত?
শায়লা, ধানমন্ডি, ঢাকা।
পরামর্শ: আপনার এত আশঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। পরিবারে কারও থাকলে যে স্তন
ক্যানসার হবেই, এমন কোনো কথা নেই। মাত্র ৭ শতাংশ রোগীর পারিবারিক ইতিহাস
থাকে, বাকিদের পরিবারে না থাকলেও হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে স্তন ক্যানসারের
কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে। এতে পরিবারে মা-খালা-বোনদের
ক্যানসারের ইতিহাস ছাড়াও আরও অনেক কিছু রয়েছে। যেমন—অল্প বয়সে মাসিক হওয়া
এবং দেরিতে বন্ধ হওয়া, বন্ধ্যত্ব, স্থূলতা, হরমোন ট্যাবলেট খাবার ইতিহাস
ইত্যাদি। এক বা একাধিক ঝুঁকি থেকে থাকলে একটু বাড়তি সচেতনতা দরকার বৈকি।
তবে আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের মতো স্ক্রিনিং সিস্টেম এতটা উন্নত হয়নি।
পশ্চিমা দেশে ৪০ বছরের অধিক নারীদের এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ বছরের অধিক
নারীদের বার্ষিক ম্যামোগ্রাফি করার বন্দোবস্ত আছে। আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে
বলব, আপনি প্রতি মাসে একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরীক্ষা করার
অভ্যাস করুন। বছরে একবার একজন চিকিৎসকের হাতে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা
সম্পন্ন করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে ম্যামোগ্রাফি বা
অন্য কোনো ইমেজিংয়ের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, ম্যামোগ্রাফি স্তন
ক্যানসারের একমাত্র ও সন্দেহাতীত পরীক্ষা নয়। আর সে জন্যই হাত দিয়ে
পরীক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই।
সমস্যা: আমার বয়স ২৪ বছর। আমি অবিবাহিত। মাসিকের আগে-পরে স্তনে ব্যথা
অনুভূত হয় এবং ভার ভার লাগে। এটা কি কোনো খারাপ লক্ষণ?
কুইনি, মুন্সিগঞ্জ।
পরামর্শ: শুধু স্তনে ব্যথা স্তন ক্যানসারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ নয়।
ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রোগ শনাক্তকরণের সময় মাত্র ১ দশমিক
২ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ রোগীর স্তনে ব্যথা থাকে। অপরদিকে ৫০ থেকে ৭০
শতাংশ নারী জীবনে কোনো না কোনো সময় নানা কারণে স্তনে ব্যথা অনুভব করতে
পারেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ঋতুবতী নারীর
সাইক্লিক্যাল ব্যথা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। হরমোনের প্রভাবে
স্তন এই সময় স্ফীত হয়, দুই স্তনেই ব্যথা করে এবং ব্যথার স্থানটি
নির্দিষ্ট করা যায় না। এইচআরটি বা জন্মনিয়ন্ত্র্রণ বড়ির কারণেও এ রকম
ব্যথা হতে পারে। মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় শরীরে হরমোনের তারতম্য হয়
এবং এ ধরনের ব্যথা হয়। কাজেই সাইক্লিক্যাল এই স্তন ব্যথা নিয়ে আদতে খুব
দুশ্চিন্তার কিছু নেই যদি না অন্য কোনো উপসর্গ, যেমন—চাকা, পিণ্ড,
বৃন্তের কোনো অস্বাভাবিকতা, ক্ষত বা তরল নিঃসৃত হওয়া ইত্যাদি সঙ্গে থাকে।
সমস্যা: আমার মেয়ে কলেজে পড়ার সময় তার বাঁ স্তনে একটা ছোট্ট দানা হয়।
চিকিৎসক বলেন, এটি ফাইব্রোএডিনোমা এবং এর চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। এমনিতেই
চলে যাবে। তিন বছর পর বর্তমানে এটি ছাড়াও ডান দিকে আরও দুটি ছোট্ট দানা
হয়েছে। এ নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত। আমরা কী করতে পারি?
তাহমিনা বেগম, ঝিকাতলা, ঢাকা।
পরামর্শ: ফাইব্রোএডিনোমা দুই দিকেই হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে।
এটি স্তনে এমন একটি সলিড টিউমার, যা থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা প্রায়
নেই বললেই চলে। তা ছাড়া আপনার মেয়ের বয়সটাও তো স্তন ক্যানসারের উপযোগী
নয়, যদিও অল্প বয়সে যে এটি একেবারেই হয় না তা নয়। দানাগুলো যদি অনেক বড়
হয় এবং অসুবিধার সৃষ্টি করে, তবে সার্জারির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
অন্যথায় তিন বছর পর পর আলট্রাসনোগ্রাফি করে বা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।
তবে মনে রাখবেন, ৪০ বছরের আগে অকারণে ম্যামোগ্রাফি করা উচিত নয়।
সমস্যা: স্তনে টিউমার হাতে ধরা পড়ার আগেই নাকি অনেকখানি ছড়িয়ে যায়। আগে
থেকেই বোঝার কি কোনো উপায় নেই যে আমরা সুস্থ আছি এবং ক্যানসারের কোনো
আশঙ্কা নেই?
জিনিয়া, চট্টগ্রাম।
পরামর্শ: ক্যানসার কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে তা নির্ভর করে তার স্বভাবের ওপর।
যেমন, ইনভেসিভ ডাকটাল কারসিনোমা যত দ্রুত ছড়ায়, অন্যরা তত দ্রুত না-ও
ছড়াতে পারে। তবে চাকা হাতে ধরার আগেই শনাক্ত করার জন্য খুব কার্যকর ও
দক্ষ স্ক্রিনিং সিস্টেম দরকার। এ জন্য টেকনোগ্রাফার থেকে শুরু করে
রেডিওলজিস্ট ও ক্লিনিসিয়ান—সবাইকেই যথাযথভাবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হতে হবে।
স্ক্রিনিংয়ের জন্য প্রতি মাসে নিজেকে নিজে পরীক্ষা করা, বছরে একবার
চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজনবোধে ৪০ বছরের ঊর্ধ্ব নারীদের
বছরে একবার ইমেজিং, যেমন—ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই, এমআর
ম্যামোগ্রাফি ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া যায়।
সমস্যা: স্তন ক্যানসারের সম্পূর্ণ চিকিৎসা বাংলাদেশে কি সম্ভব?
সাহানা হক, খিলগাঁও, ঢাকা।
পরামর্শ: স্তন ক্যানসার হচ্ছে সব ক্যানসারের মধ্যে এমন একটি ক্যানসার, যা
সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা
সম্ভব। সুখের বিষয় যে রোগ শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে এর চিকিৎসা ও যথাযথ
মনিটরিং বা ফলোআপ—সবই বাংলাদেশে সম্ভব এবং সুলভ হয়েছে। রোগনির্ণয়ের জন্য
ম্যামোগ্রাফি, এমআর ম্যামোগ্রাফি, বিশেষ আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই এমনকি পেট
সিটি স্ক্যান পর্যন্ত—সবই বাংলাদেশে হচ্ছে। শুধু স্তন টিউমার সার্জারি
করেন এমন বিশেষজ্ঞ সার্জনরাও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন হাসপাতালে
সেবা দিচ্ছেন। আর সার্জারি-পরবর্তী চিকিৎসা, যেমন—কেমো ও রেডিওথেরাপিও
সুলভ। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মহাখালী জাতীয় ক্যানসার
গবেষণা ইনস্টিটিউট সব শ্রেণীর রোগীর জন্য সুলভে এসব চিকিৎসাসেবা দিয়ে
যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালও এ বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো,
স্বাগতম :
Friday, August 1, 2014
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment